তারকা জুটি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস বিয়ে করেন ২০০৮ সালে। তবে দু’জনের বিয়ে ও সন্তানের খবরটি প্রকাশ্যে আসে চলতি বছরের শুরুতে। বছরটা শেষ হচ্ছে বিচ্ছেদের খবরে।
‘নিখোঁজ’ অপু ফিরলেন ঢাকায়
২০১৬ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ নিখোঁজ হন অপু বিশ্বাস। ফোনে কিংবা ফেইসবুকে-কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হঠাৎ ঢাকায় ফিরে চমকে দেন ভক্তদের।
কোথায় ছিলেন তিনি? সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছে। শুধু এতটুকু বলেছিলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।
অপু বিশ্বাস দাবি করেছেন, শাকিব খানের কারণেই এতদিন বিয়ে ও সন্তানের খবর লুকিয়ে রাখেন তিনি। অন্তরাল থেকে বেরিয়ে সোমবার একটি টিভিতে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর শিশুসন্তানকে নিয়ে বাসায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এই অভিনেত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলনের আগে ১০ এপ্রিল সন্তান কোলে এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে দাবি করেন, শাকিব খানের সঙ্গে ২০০৮ সালে বিয়ে হয় তার। কোলের সন্তানের বাবা শাকিব।
অবন্তী বিশ্বাস অপু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে অপু ইসলাম খান নাম নিয়ে চিত্রনায়ক শাকিবকে বিয়ে করার কথা বলেছেন তিনি। তার সন্তানের নাম আব্রাহাম খান জয় বলে জানান তিনি।
বিয়ে ও সন্তান হওয়ার খবর শাকিবের কারণেই চেপে রেখেছিলেন বলে দাবি করেন অপু। তবে নানা সময়ে শাকিব সন্তানের জন্য অর্থ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
অপু বলেন, “আমি ১০ মাস আড়ালে গেছি। আমাকে নিয়ে অনেক বিরূপ মন্তব্য হয়েছে, আমি গায়ে লাগাই নাই। আমার শাকিবকে ঠিক রাখতে হবে।”
শাকিবের প্রতিক্রিয়া
সন্তান কোলে স্ত্রী অপু বিশ্বাসের টিভি স্টেশনে গিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার ঘটনায় শাকিব খান খানিকটা খাপ্পা হয়েছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “২০০৮ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছে ঠিক। আমাদের ছেলের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। অপু আজকে যে কাজটা করল সেটি ভালো করেনি।”
শাকিব খান গণমাধ্যমে বলেছিলেন, “ছেলের দায়িত্ব নেব কিন্তু অপুর দায়িত্ব নেব না।” পরে সমালোচনার মুখে অপুর দায়িত্বও নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
তবে দু’জনের মধ্যে দূরত্বটা স্পষ্ট হতে থাকে দিনে দিনে। একমাত্র পুত্র আব্রাহাম খানের প্রথম জন্মদিনের কার্ডে শাকিব খানের ছবি ছাড়াই পুত্রের সঙ্গে নিজের ছবি ছাপান অপু।
এর সমালোচনা করেন শাকিব। সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শাকিবের অনুপস্থিতি দু’জনের দূরত্বের বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দেয়।
পুত্রকে রেখে অপুর ভারতযাত্রা: দু’জনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
নিকেতনে অপুর বাসায় পুত্র আব্রাহাম খানকে দেখতে গিয়ে শাকিব খান অভিযোগ তোলেন, ছেলেকে ঘরে তালাবন্ধ করে কাজের বুয়ার কাছে রেখে ভারতে গেছে অপু।
পরে অপু বিশ্বাস এ অভিযোগ নাকচ করে বলেন, কাজের বুয়ার কাছে নয়, বড়বোনের কাছে ছেলেকে রেখে যান তিনি।
উল্টে তিনিই অভিযোগ করেন, এতদিন ছেলের খবর নেননি তিনি, বাসায় না থাকায় হঠাৎ কেন খবর নেওয়ার প্রয়োজন পড়লো?
বিচ্ছেদের গুঞ্জন
বছরের মাঝামাঝি থেকেই দু’জনের বিচ্ছেদের গুঞ্জন রটে। বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান খোলাখুলিভাবে কিছু না বললেও অপু বিশ্বাস গুঞ্জনকে উড়িয়ে গ্লিটজকে বলেছিলেন, “এসবের মধ্যে শাকিব খানও নাই আমিও নাই।”
অপুকে শাকিবের ‘তালাকনামা’
গুঞ্জনটাই সত্যি হল। আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মাধ্যমে ২২ নভেম্বর অপুর বাসার ঠিকানায় তালাকনামা পাঠিয়েছেন শাকিব খান।
তালাকের কারণ হিসেবে আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, “বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে অপু বিশ্বাস শাকিব খানকে বিয়ে করেছিলেন। কথা ছিল তিনি মুসলিম রীতিনীতি মেনে চলবেন ও গৃহিনী হয়ে থাকবেন। কিন্তু অপু বিশ্বাস সে কথা রাখেননি।”
তালাকনামায় শাকিব অভিযোগ তোলেন, পুত্রসন্তান জয়কে বাড়িতে গৃহকর্মীর সঙ্গে তালাবন্ধ রেখে ‘ছেলেবন্ধুকে নিয়ে’ দেশের বাইরে যান অপু।
আইনজীবী বলেন, “এসব ঘটনার কারণেই শাকিব খান অপুকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।” গত ২২ নভেম্বর অপু বিশ্বাসের ঢাকার বাসা ও বগুড়ার ঠিকানায় রেজিস্ট্রি করা হলফনামা আকারে তালাকনামা পাঠানো হয়।
তালকের কথা জানিয়ে শাকিবের পাঠানো নোটিশ
আটবছরের এ সংসারের ভবিষ্যত কী তাহলে?
আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নিয়ম হলো ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সালিশি পরিষদ দু’জনকে ডেকে নিয়ে বসবে যেন সংসারটি ভেঙে না যায়।
যদি শাকিব খান তারপরও মনে করেন এটাই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তবে ৯০ দিন পর তালাকনামা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যাবে।”
তবে বিডিনিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অপু বিশ্বাস বলেছেন, “এই ডিভোর্স মানি না।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন